বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন
আল আমিন বিন আমজাদ: মানবিক পুলিশের এক অন্য রকম দৃষ্টান্ত দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিপিএম,পিপিএম (বার)।পেটের দায়ে সংসারের ঘানি টানতে ভ্যান চালানোকে পেশা হিসেবে নিয়েছে জুঁইমনি। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া জীবনের সাথে যুদ্ধ করে সংসারের হাল ধরা জুঁই মনির বয়স ১০ বছর। যে বয়স তার পুতুল খেলার কথা সেসময় তার হাতে ভ্যানের হ্যান্ডেল।কোমল হাত দুটোতে কড়া পড়ে গেছে মেয়েটার। নিজেদের ঘর বাড়ি নাই,বন বিভাগের জায়গায় অস্থায়ী একটা থাকার জায়গা।তার বাবার নাম নাম জিয়া,বাড়ি পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের (মধ্যপাড়া পাথর খনি এলাকার) আকন্দ পাড়া গ্রামে।জন্মগত ভাবেই তার বাবা চোখে কম দেখতেন।গত তিন বছর থেকে একেবারে দেখেন না বললেই চলে। তারা চার বোন এক ভাই। ভাইয়ের বয়স তিন বছর। আয়ের কোন সংস্থান নেই তাদের।
বড় বোনের বিয়ে হয়েগেছে।মেঝ বোন অন্যের বাসায় কাজ করে। জুঁইমনি তৃতীয় তার ছোট আরও দুই জন।বনের খড়ি কুড়িয়ে,অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোন মতে দু বেলা খাবার জোটে তাদের। কখনো এক বেলা খাবার জোটে আর বাকি দুবেলা জোটেই না। মাঝে মাঝে সব্বাইকে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয় অসহায় এই পরিবারটিকে।প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও এত্ত বড় পরিবার চালানোর জন্য তা যত সামান্য। পরিবারে রোজগার করার মত উপযুক্ত মানুষ না থাকায় শেষ পর্যন্ত জুই মনিই হাল ধরেছে তার পরিবারের।ইচ্ছা করলে খুব সহজেই ভিক্ষাবৃত্তি করতে পারতেন তার বাবা।ছোট্ট জুঁই মনি যে ভিক্ষার টাকা ঘরে তুলবে না।তার জেদের কারণেই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিন বছর আগে ভ্যান ক্রয় করেন তার মা সাহারা বেগম।প্রথমে প্যাডেলে চালিত ভ্যান ক্রয় করে কিছু দিন চালায় জুঁই।পরে কিছু টাকা খরচ করে ঐ ভ্যানকে ব্যাটারি চালিত করেন।
ভ্যাপ্রতিদিন সে ভাড়া নিয়ে ছুটে চলে পার্বতীপুর,ফুলবাড়ীসহ বিভিন্ন জায়গায়।ছোট মেয়ে বলে অনেকেই তার ভ্যানে চড়তে চাইতো না। তখন তার বড় হতে ইচ্ছে হতো।সে সবসময় স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে মানুষের মত মানুষ হবে।বাবার চোখের চিকিৎসা করবে।কিছুদিন পূর্বে জুইমনিকে নিয়ে নিউজ প্রকাশিত হয়,সেই নিউজ গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট হলে দিনাজপুরের মাননীয় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিপিএম,পিপিএম(বার) জানতে পারেন। বিষয়টি তার হৃদয়ে নাড়া দেয়।এর পর তিনি দিনাজপুর জেলা হতে তার প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। সাথে পাঠান জুঁইয়ের পরিবারের জন্য এক মাসের খাবার আর কিছু নগদ টাকা।দিনাজপুর জেলা পুলিশের এই ক্ষুদ্র অনুদান হয়তো জুঁই মনিকে টিকে থাকার লড়াইয়ে প্রেরণা যোগাবে।সে জানবে আজ থেকে সে একা নয়।দিনাজপুর জেলা পুলিশ সাধ্যমত সবসময় তার পাশে থাকবে।
Leave a Reply